কক্সবাংলা ডটকম(২৬ আগস্ট) :: শিক্ষাঙ্গনে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। নানা দাবি নিয়ে আন্দোলনের মাঠে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষকরা বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি নিয়ে আন্দোলনের মাঠে রয়েছেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের খুব একটা মনোযোগ নেই।
অবকাঠামো নির্মাণের দাবিতে প্রায়ই রাস্তায় নামছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নানা দাবিতে আন্দোলনের মাঠে রয়েছে আরো অর্ধডজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নীতিমালা চূড়ান্তকরণ ও রোডম্যাপ ঘোষণা এবং সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে গত রবিবার প্রশাসনিক ভবন তালা মেরে দেয় শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রায় আট ঘণ্টা ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
অবকাঠামো উন্নয়ন, জমি অধিগ্রহণ ও শতভাগ পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটসংলগ্ন ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এতে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছে।
আগামী ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ১৪ সেপ্টেম্বর সারা বাংলাদেশে প্রতিটি এমপিওভুক্ত স্কুল, মাদরাসা কারিগরি প্রতিষ্ঠান অর্ধদিবস কর্মবিরতি এবং ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।
এর পরও যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে ১২ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ভাড়া পার্সেন্টেজ হিসেবে বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছি। মন্ত্রণালয় বলেছে, ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বাড়ি বৃদ্ধি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে আমাদের চিকিৎসাভাতা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করা হবে বলে জানিয়েছে।
আমরা এই বিষয় নিয়ে আর বেশি কিছু বলিনি। আমাদের দাবি যৌক্তিক, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছে। কিন্তু তারা যৌক্তিক দাবি পূরণে গড়িমসি করছে। আমরা দাবি আদায়ে সময় বেঁধে দিয়েছি। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাব।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। আগামী ৩০ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সমাবেশ হবে। এতে দেশের ৬৪ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশ নেবেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের ছয়টি পৃথক সংগঠনের মোর্চা ‘সহকরী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ এ মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন বলেন, ‘এর আগে আমরা সরকারকে একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলাম। সে সময় পার হলেও আমাদের দাবিদাওয়া পূরণে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এ জন্য আমরা আগামী ৩০ আগস্ট ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছি। এ সমাবেশে সারা দেশের প্রাথমিকের শিক্ষকরা অংশ নেবেন। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সহকারি প্রাথমিক উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসারদের দশম থেকে নবম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। সম্প্রতি তারা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তাঁরা বলছেন, প্রধান শিক্ষক পদটি উচ্চতর আদালতের রায়ে দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট পদটি নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে এবং পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদটি নবম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে উপজেলা ও থানা সহকারী শিক্ষা অফিসার পদটি দশম গ্রেডেই অপরিবর্তিত রয়েছে, যা নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের এই কর্মকর্তারা।
স্বস্তিতে নেই সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা। দেশের প্রায় ১৫০টি উপজেলায় এসব পদ শূন্য। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এমনকি চলতি দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও তা অজ্ঞাত কারণে বন্ধ রয়েছে।
ফলে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাও তাঁদের দাবি আদায়ে সরব। ফলে মনিটরিং তেমন একটা হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যে যার মতো করে চলছে।
সূত্র জানায়, শিক্ষা প্রশাসনও ভালো চলছে না। বর্তমানে বিভিন্ন অধিদপ্তরে যাঁরা মহাপরিচালক রয়েছেন, তাঁরা তাঁদের দক্ষতা দেখাতে পারছেন না। এমনকি একাধিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রচণ্ড বিরোধ দেখা দিয়েছে। স
বাই ক্ষমতার দাপট দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন খাতে আগের মতোই বহাল ঘুষ-দুর্নীতি। কেউ শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের কথা ভাবছেন না। শিক্ষার্থীদের কথা ভাবছেন না।
এ ছাড়া চলতি বছর বই পেতে পেতে মার্চ-এপ্রিল সময় লেগেছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছে। তবে আগামী বছরও পাঠ্যবই যথাসময়ে না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি নানা সমস্যার কারণে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে সরকারি ক্রয় কমিটি। এখন যদি পুনঃ দরপত্র করতে হয়, তাহলে কোনোভাবেই ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপার কাজ শেষ হবে না।
এ ছাড়া আর মাত্র চার মাস বাকি থাকলেও এখন অন্যান্য শ্রেণিরও বই ছাপা শুরু হয়নি। ফলে আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপানোর ক্ষেত্রেও বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
গত সোমবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত সংলাপে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, ‘আমাদের এই সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে শিক্ষাটা অগ্রাধিকার থেকে ছুটে গেছে। কোথায় গেছে বলতে পারি না। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত, কিছু কিছু কাজ তাঁরা করেছেন, যা সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসবে না।
শিক্ষায় আমরা শুধু পুনর্গঠন চাইছি না, রূপান্তর চাইছি। রূপান্তর শুধু বই ছাপালেই বা শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করলে আসবে না। শিক্ষার্থীদের নীতিমান মানুষ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার্থী বানিয়ে নয়, শিক্ষার্থীকে মানুষ করতে হবে।’